ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা

সূরা আল-ফিল

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | NCTB BOOK

সূরা ফিল আল-কুরআনের ১০৫তম সূরা। এটি মক্কা নগরীতে অবতীর্ণ হয় । এর আয়াত সংখ্যা পাঁচটি। ফিল অর্থ হাতি। এ সূরায় হস্তিবাহিনীর করুণ পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে বিধায় এ সূরার নাম রাখা হয়েছে সূরা ফিল।

শানে নুযুল
আরবের ইয়ামান প্রদেশের শাসনকর্তার নাম ছিল আবরাহা। সে ছিল খ্রিষ্টান। সে সানআ নামক স্থানে একটি সুন্দর ও বহু মণিমুক্তা খচিত গির্জা তৈরি করে । অতঃপর মানুষকে তার গির্জায় উপাসনার জন্য আহ্বান করে। সে চাইল মানুষ যেন মক্কা শরিফে অবস্থিত পবিত্র কাবাগৃহ ছেড়ে তার গির্জায় উপাসনার জন্য আগমন করে। কিন্তু মানুষ কাবাগৃহকে খুব সম্মান করত। সুতরাং তারা তার আহ্বানে সাড়া দিল না । তারা আগের মতোই কাবাগৃহে উপাসনা করতে লাগল। এতে আবরাহা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। সে চিন্তা করল- কাবাগৃহ ধ্বংস না করলে তার উদ্দেশ্য সফল হবে না। এ জন্য সে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে কাবাগৃহ ধ্বংসের জন্য মক্কা নগরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সে বহু সৈন্য সংগ্রহ করে এবং ১৩টি বিশালকায় শক্তিশালী হাতি নিয়ে অগ্রসর হয়। আবরাহার আক্রমণের সংবাদ পেয়ে আব্দুল মুত্তালিব কুরাইশদের পাহাড়ে আশ্রয় নিতে বললেন। আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন রাসুলুল্লাহ (স.)-এর দাদা ও কুরাইশদের সর্দার। তিনি জানতেন যে কাবা হলো আল্লাহর ঘর। সুতরাং এ ঘরের রক্ষার দায়িত্বও আল্লাহরই উপর । আব্দুল মুত্তালিবের নির্দেশে কুরাইশগণ পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে আশ্রয় নিল। পরদিন ভোরে আবরাহা তার বাহিনী নিয়ে কাবা অভিমুখে রওয়ানা হলো। এমন সময় আল্লাহ তায়ালা সমুদ্রের দিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি প্রেরণ করলেন। এগুলো ছিল একপ্রকার ছোট পাখি। এরা দুই পায়ে দুটি এবং ঠোঁটে একটি করে কংকর নিয়ে এলো। অতঃপর এগুলো আবরাহার বাহিনীর উপর নিক্ষেপ করল। ফলে আবরাহার সৈন্যবাহিনী ধ্বংস হয়ে গেল। আর আবরাহা আহত অবস্থায় পালিয়ে গেল। পরে তার ক্ষতস্থানে পচন ধরে এবং ভয়ঙ্কর কষ্টের পর সে মারা যায় । এভাবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর ঘরকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করেন।

হস্তিবাহিনীর ঘটনাটি ৫৭০ সালে সংঘটিত হয়। আমাদের প্রিয়নবি (স.) এ বছরই জন্মগ্রহণ করেন। এ অলৌকিক ঘটনা তাঁর জন্মের ৫০দিন পূর্বে ঘটেছিল। আল্লাহ তায়ালা এ সূরা নাজিল করে এ বিশেষ ঘটনা সকলকে জানিয়ে দেন।

অনুবাদ

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ

দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।

الم ترَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاصْبِ الْفِيْلِ

১. আপনি কি দেখেন নি, আপনার প্রতিপালক হস্তি বাহিনীর প্রতি কিরূপ আচরণ করেছিলেন?

الَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِي تَضْلِيلٍ 

২. তিনি কি তাদের কৌশল ব্যর্থ করে দেন নি?

وَارْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا أَبَابِيلَ 

৩. আর তিনি তাদের প্রতি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি প্রেরণ করেন।

تَرْمِيهِمُ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجيل

8. সেগুলো তাদের উপর কংকর জাতীয় পাথর নিক্ষেপ করে।

فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّا كُولٍ

৫. অতঃপর তিনি তাদের ভক্ষিত তৃণসদৃশ করেন।

ব্যাখ্যা
ইয়ামানের বাদশাহ আবরাহা ছিল অনেক ধন-সম্পদ ও সৈন্য-সামন্তের অধিকারী। তার ছিল বিশাল হস্তিবাহিনী। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার কুদরতের তুলনায় এসব ধন-সম্পদ, ক্ষমতা কিছুই না। বরং আল্লাহ তায়ালা যা চান তাই হয়। তিনি যাকে যেভাবে ইচ্ছা লাঞ্ছিত, অপমানিত করতে পারেন।

আবরাহা গর্ব ও অহংকারবশত আল্লাহ তায়ালার সাথে শত্রুতা করে। ফলে সে ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা ছোট ছোট পাখির সাহায্যে তার বিশাল বাহিনী ধ্বংস করে দেন। বস্তুত এটা ছিল আল্লাহর কুদরত মাত্র। আল্লাহর সাথে শত্রুতা ও বিরোধিতাকারীদের তিনি এভাবেই ধ্বংস করে থাকেন।

শিক্ষা : এ সূরার শিক্ষা নিম্নরূপ :
■ আল্লাহদ্রোহীদের আল্লাহ তায়ালা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন।
■ তিনি তাদের সমস্ত কলাকৌশল ব্যর্থ করে দেন।

আমরা আল্লাহ তায়ালার অসীম ক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্বাস রাখব। তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলব। তাঁর দীনের সাথে কখনো শত্রুতা করব না।

কাজ : সূরা ফিল নাজিল হওয়ার পটভূমি সম্পর্কে শিক্ষার্থী বন্ধুকে বলবে এবং এ সূরার শিক্ষা নিয়ে তার সাথে আলোচনা করবে।
Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion